নবায়নযোগ্য জ্বালানির নতুন বাহক: ‘গ্রিন অ্যামোনিয়া’ বিশ্বব্যাপী জাহাজ শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করছে
জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর ঐতিহাসিক নির্ভরতা কমাতে বিশ্বজুড়ে জাহাজ চলাচল (Shipping Industry) শিল্প এখন ‘গ্রিন অ্যামোনিয়া’ (Green Ammonia)-র দিকে দ্রুত ঝুঁকছে। এটি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ (যেমন সৌর বা বায়ুশক্তি) ব্যবহার করে উৎপাদিত হয় এবং ব্যবহারের সময় জলবায়ু পরিবর্তনকারী কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস প্রায় শূণ্য মাত্রায় (near zero-carbon emission) নির্গত করে।

বৈশ্বিক বাণিজ্যের মেরুদণ্ড এই জাহাজগুলি থেকে নির্গত বিপুল পরিমাণে কার্বন কমানোর লক্ষ্যে গ্রিন অ্যামোনিয়াকে সম্ভাব্য ‘গেম-চেঞ্জার’ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা বৈশ্বিক জ্বালানি রূপান্তরে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
- টেকনোলজির অগ্রগতি: বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক জ্বালানি কোম্পানি এবং শিপিং জায়ান্ট গ্রিন অ্যামোনিয়া চালিত ইঞ্জিন এবং বন্দরগুলির জন্য বিশেষ সরবরাহ চেইন (Supply Chain) অবকাঠামো তৈরি করার জন্য বিশাল বিনিয়োগ করছে।
- চ্যালেঞ্জ: যদিও এটি একটি শূন্য-কার্বন জ্বালানি, এর বিষাক্ততা (toxicity) এবং সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চ ব্যয় এটিকে বাণিজ্যিকীকরণের পথে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করছে। তবে, বিজ্ঞানীরা নিরাপত্তার মান উন্নত করতে নিরলস কাজ করছেন।
- বৈশ্বিক গুরুত্ব: গ্রিন অ্যামোনিয়ার সফল বাণিজ্যিকীকরণ বৈশ্বিক বাণিজ্যকে পরিবেশবান্ধব করবে এবং বৈশ্বিক জ্বালানি রূপান্তরে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (IMO)-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমনের প্রায় ৩% আসে জাহাজ শিল্প থেকে। এই চাপ কমাতে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক জ্বালানি কোম্পানি, যেমন জার্মানির ‘গ্রিন এনার্জি ফিউচার ইনক.’, এবং বিশ্বের বৃহত্তম শিপিং জায়ান্টগুলি এখন গ্রিন অ্যামোনিয়া চালিত ইঞ্জিন এবং বন্দরগুলির জন্য বিশেষ সরবরাহ চেইন অবকাঠামো (Supply Chain) তৈরি করতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
সিঙ্গাপুর ও রটারড্যামের মতো প্রধান বন্দরগুলি ২০৩০ সালের মধ্যে এই নতুন জ্বালানির জন্য বিশেষ টার্মিনাল নির্মাণে একটি যৌথ উদ্যোগ শুরু করেছে বলে সম্প্রতি ‘জার্নাল অফ মেরিটাইম ইনোভেশন’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে, এই প্রযুক্তির সফল বাণিজ্যিকীকরণের পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
- প্রথমত, অ্যামোনিয়ার বিষাক্ততা (toxicity) এবং এর সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রা এটিকে জাহাজে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে উচ্চ নিরাপত্তার মান দাবি করে।
- দ্বিতীয়ত, বর্তমানে গ্রিন অ্যামোনিয়া উৎপাদনের খরচ প্রচলিত মেরিন জ্বালানির চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি। বিজ্ঞানীরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও উৎপাদন দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নিরলস গবেষণা চালাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT)-এর গবেষকরা এমন একটি অনুঘটক (catalyst) তৈরি করছেন যা অ্যামোনিয়া উৎপাদনের খরচ ২৫% পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
