ইলেকট্রনিক বর্জ্য পাচার : ‘বিষাক্ত ভাগাড়’ হচ্ছে উন্নয়নশীল বিশ্ব, স্বাস্থ্য ঝুঁকি চরমে
ঢাকা, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫ – উন্নত দেশগুলি থেকে ইলেকট্রনিক বর্জ্য (E-Waste) অবৈধভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পাচার হওয়ার ঘটনা পরিবেশগত অপরাধের এক নতুন এবং বিপজ্জনক মাত্রা যোগ করেছে।
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের ফলে ই-বর্জ্যের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বর্জ্যে থাকা সীসা (Lead), পারদ (Mercury), ক্যাডমিয়াম (Cadmium) এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থগুলি উন্নয়নশীল বিশ্বের জল, মাটি এবং জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে, যা এক গভীর পরিবেশগত ও মানবাধিকার সংকট সৃষ্টি করেছে।
পাচারকারীরা প্রায়শই ব্যবহৃত এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ছদ্মবেশে এই কোটি কোটি টনের বর্জ্য এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলিতে পাঠায়, যেখানে পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত অনিরাপদ, নিয়ন্ত্রিত নয় এবং পরিবেশগত মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় না।
ইউরোপোল (Europol)-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, বছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ই-বর্জ্য অবৈধভাবে ইউরোপ থেকে পাচার হয়। এই অপরাধী নেটওয়ার্কগুলি শুল্ক ফাঁকি দেওয়া এবং দুর্বল পরিবেশ বিধিমালাকে কাজে লাগিয়ে বিপুল মুনাফা লাভ করে।
এই অবৈধ ডাম্পিং-এর সবচেয়ে বড় শিকার স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠী। তারা বিষাক্ত বর্জ্য থেকে তামা, সোনা বা অন্যান্য মূল্যবান ধাতু আহরণের কাজ করে, যার ফলে তাদের স্নায়ুতন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP)-এর এক সমীক্ষা অনুযায়ী, এই বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এলাকায় বসবাসকারী শিশুদের রক্তে পারদের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি পাওয়া যায়।
এই অপরাধ দমনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি, যেমন ইন্টারপোল, এই অবৈধ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আরও কঠোর নজরদারি এবং আন্তর্জাতিক পরিবহন নিয়ন্ত্রণ চুক্তি, বিশেষ করে বাসেল কনভেনশন (Basel Convention)-এর কার্যকর প্রয়োগের জন্য সদস্য দেশগুলিকে চাপ দিচ্ছে।
