জলবায়ু অভিযোজন অর্থায়ন সংকট: উন্নয়নশীল দেশগুলির চাহিদা $৩৬৫ বিলিয়ন, প্রবাহে ১২-১৪ গুণ ঘাটতি
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলির অভিযোজন অর্থায়ন প্রয়োজন এবং আন্তর্জাতিক তহবিল প্রবাহের মধ্যেকার বিশাল ব্যবধান বিশ্বকে এক অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) কর্তৃক প্রকাশিত ‘অ্যাডাপ্টেশন গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৫’ একটি কঠোর বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে: উন্নয়নশীল দেশগুলির বার্ষিক অভিযোজন অর্থায়নের প্রয়োজন প্রায় $৩১০ বিলিয়ন থেকে $৩৬৫ বিলিয়ন পর্যন্ত, যেখানে আন্তর্জাতিক পাবলিক ফান্ডের বর্তমান প্রবাহ মাত্র $২৬ বিলিয়ন। এর অর্থ হলো, এই দেশগুলির অভিযোজন অর্থায়ন প্রয়োজন বর্তমান প্রবাহের চেয়ে ১২ থেকে ১৪ গুণ বেশি।
এই বিশাল আর্থিক ব্যবধান জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলির জীবন, জীবিকা এবং পুরো অর্থনীতিকে গুরুতর বিপদের মুখে ফেলছে। গ্লাসগো জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য ছিল ২০২৫ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক পাবলিক অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করা, কিন্তু বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সেই লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব।
বরং আন্তর্জাতিক প্রবাহ গত বছর সামান্য কমেছে, যা সংকটকে আরও গভীর করেছে। এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে অভ্যন্তরীণভাবে ঘাটতি মেটাতে গিয়ে ঋণের বোঝা বাড়াতে হচ্ছে বা অত্যাবশ্যক অভিযোজন প্রকল্পগুলি (যেমন সমুদ্র তীরবর্তী বাঁধ, জল-সহনশীল কৃষি) বাতিল করতে হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি এই ঘাটতি চলতে থাকে, তবে ২০৩০ সালের মধ্যে এই ব্যবধান আরও বাড়তে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তিনটি ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন:
- ১. ঘাটতির বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ: কার্বন নির্গমন দ্রুত কমানোর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং সেই অনুযায়ী অভিযোজন খরচ বাড়ানো বন্ধ করতে হবে।
- ২. অর্থায়নের পরিমাণ বৃদ্ধি: শুধু ঐতিহ্যবাহী দাতা দেশগুলির উপর নির্ভর না করে, নতুন অর্থায়নকারীদের (যেমন বহুজাতিক ব্যাংক, উন্নত বেসরকারি খাত) কাছ থেকে অর্থায়ন সংগ্রহ করতে হবে।
- ৩. বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ: নীতিগত সহায়তা এবং মিশ্র অর্থায়নের (Blended Finance) মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগকে অভিযোজন প্রকল্পে আকৃষ্ট করতে হবে, যার মাধ্যমে বছরে প্রায় $৫০ বিলিয়ন পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থায়ন সম্ভব।
প্রতিবেদনটি বিশেষভাবে সতর্ক করেছে যে, উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য জলবায়ু অর্থায়নে ঋণের উপকরণগুলির অনুপাত বাড়ানো উচিত নয়, কারণ এটি তাদের আর্থিক দুর্বলতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। বরং, অনুদান-ভিত্তিক এবং উচ্চ-ছাড়ের (highly concessional) অর্থায়নের উপর জোর দেওয়া উচিত।
এই বৈশ্বিক অর্থায়নের ঘাটতি প্রমাণ করে যে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের পাশাপাশি অভিযোজনকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য একটি কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন।
