করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের আদেশ অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে দেশের সকল পর্যটন কেন্দ্রগুলো। অন্যান্য সকল পর্যটন কেন্দ্রের মতো বন্ধ রয়েছে মৌলবীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় নতুন রূপে ফিরেছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। অন্যান্য বছর ঈদের দিন থেকে অনন্ত ৪ থেকে ৫ দিন এখানে মানুষের ভিড় থাকে দেখার মতো। কিন্তু এবার আর তা হয়নি। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে মানুষের প্রবেশের কোনো সুযোগ ছিলো না এবার। আর সব মিলিয়ে এক অন্য রকম পরিবেশ ছিলো এবার। সেই সুযোগে এখানে থাকা সকল প্রাণী ও জীববৈচিত্র ফিরেছে তাদের আপন গতিতে।

উল্লুকের আওয়াজ, বানরের লাফালাফি, পাখির কিচিরমিচির শব্দে বনের স্বাভাবিকতা ও নতুন রূপে ফিরতে শুরু করেছে লাউয়াছড়া।
সরেজমিন ঘুরে লাউয়াছড়া বনের নিরব নিস্তব্দ পরিবেশে গাছে গাছে লাফালাফি, খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানো প্রাণির বিচরণ ও বনের ভেতরে বসবাসরতদের সাথে কথা বলে এ চিত্র দেখা যায়।
জানা যায়, বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণি, উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। গত কয়েক দশকে প্রাকৃতিক বনের গভীরতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। প্রাচীনতম গাছগাছালি চুরি হয়ে যাওয়া, মাগুরছড়ায় গ্যাসকূপ বিস্ফোরণ, বনের ভেতর দিয়ে উচ্চ শব্দে রেলপথে ট্রেন চলাচল, সড়কপথে যানবাহনের যাতায়াত, গাড়ির হর্ন, অত্যধিক দর্শনার্থীর বিচরণ, হই-হুল্লোড়, পার্শ্ববর্তী টিলাভূমিতে হোটেল, কটেজ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম সব মিলিয়ে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে বন ও বন্যপ্রাণি। কাঠচোর চক্রের অপতৎপরতাসহ নানাবিদ কার্যক্রমের ফলে এই বনের সংকটাপন্ন অবস্থা।
বন ফাঁকা হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য। করোনায় সড়কে যানচলাচল ও বনে মধ্যে পর্যটক না থাকায় চিরসবুজ বনে লাউয়াছড়া পরিণত হয়েছে। নতুন রূপে ফিরেছে লাউয়াছড়া। পাশাপাশি ট্রেন ও যানবাহন বন্ধ হওয়ায় গাড়ির হর্ন ও উচ্চ শব্দ বন্ধ হওয়ায় বনের প্রাণি সমুহের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। এখন প্রতিনিয়ত উৎফুল্ল প্রাণির লাফালাফি, অবাধ বিচরণ ও খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানোর চিত্র চোখে পড়ে।
লাউয়াছড়া পুঞ্জির বাসিন্দা সাজু মারচিয়াং বলেন, এই বনে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের ভিড় দেখা যেত, করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর উদ্যান বন্ধ ঘোষণা করায় লাউয়াছড়া বন যেন ফিরে এসেছে নতুন রূপ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উল্লুকের আওয়াজ, বিভিন্ন প্রজাতির বানরের লাফালাফি, পাখির কিচিরমিচির শব্দ, সন্ধ্যায় বন মোরগের ডাক বনটিতে যেন পেয়েছে হারানো প্রাণ। তিনি আরো বলেন, এভাবে বনকে দেখতে পাবো তা ছিল কল্পনার বাইরে। সরকার যদি কয়েক মাসের জন্য উদ্যান বন্ধ ঘোষণা করতো তাহলে বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতির জন্য খুবই ভালো হতো।