কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত পদচিহ্ন এবং ডাটা সেন্টার ওয়াটার ক্রাইসিস
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অভূতপূর্ব সুযোগ তৈরি করলেও, এর নিজস্ব ‘পরিবেশগত পদচিহ্ন’ (Environmental Footprint) এখন এক নতুন নীতিগত উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
এআই-এর জন্য প্রয়োজনীয় বিশাল ডাটা সেন্টার (Data Center) গুলো যে হারে শক্তি ও জল ব্যবহার করছে, তাতে বিশ্বজুড়ে স্থানীয় জল সরবরাহ এবং কার্বন নির্গমনের লক্ষ্যমাত্রা হুমকির মুখে পড়ছে।
ইউএনইপি (UNEP) এবং এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট স্টাডিজ ইনস্টিটিউট (EESI)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এআই সার্ভার এবং ডাটা সেন্টারগুলির শক্তি এবং জল খরচ অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়ছে।
একটি একক হাইপারস্কেল ডাটা সেন্টার, যা এআই মডেলগুলিকে প্রশিক্ষণ দিতে ব্যবহার হয়, দৈনিক ৫০ লক্ষ গ্যালন পর্যন্ত জল ব্যবহার করতে পারে—যা একটি ছোট শহরের সমতুল্য।
এই জল মূলত সার্ভারগুলি ঠান্ডা রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখানে প্রায় ৮০% জল বাষ্পীভূত হয়ে পরিবেশে হারিয়ে যায়, যা স্থানীয় জল সম্পদকে ফুরিয়ে দেয়। জল-সংকটাপন্ন অঞ্চলে এই ডাটা সেন্টারগুলির উপস্থিতি সামাজিক ও পরিবেশগত সংঘাতের জন্ম দিচ্ছে।
অন্যদিকে, এআই মডেলগুলির প্রশিক্ষণ ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিপুল পরিমাণ শক্তি, বিশেষ করে যদি তা জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে আসে, তবে কার্বন নির্গমন নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে।
২০২৭ সালের মধ্যে বৈশ্বিক ডাটা সেন্টারগুলির বিদ্যুৎ ব্যবহার ১,০০০ TWh (টেরাওয়াট-ঘণ্টা) ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গুগল এবং মাইক্রোসফ্টের মতো নেতৃস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি তাদের ডেটা সেন্টারের জল ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির কথা স্বীকার করেছে।
নীতি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই সমস্যা মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত শূন্যতা (Policy Gap) বিদ্যমান। সরকারগুলি জাতীয় এআই কৌশল প্রণয়ন করলেও, সেখানে পরিবেশগত সুরক্ষা (environmental sustainability) এবং ওয়াটার রিসোর্স প্ল্যানিং-কে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
তাই এআই-এর সুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি এর পরিবেশগত প্রভাব পরিমাপের জন্য একটি মানসম্মত পদ্ধতি (Standardized Metric) প্রতিষ্ঠা করা, ডাটা সেন্টারগুলির জন্য নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং ‘ওয়াটার ইউজ ইফেক্টিভনেস (WUE)’-এর মতো দক্ষতা মেট্রিক্সের ওপর জোর দেওয়া জরুরি।
এটি প্রমাণ করে যে, প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষার নীতিমালা তৈরি না হলে তা নতুন সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
