কার্বন ক্যাপচার ও স্টোরেজ (CCS): জীবাশ্ম জ্বালানি টিকিয়ে রাখার ‘নৈতিক বিপদ’ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিতর্ক
বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণের প্রযুক্তি, কার্বন ক্যাপচার ও স্টোরেজ (CCS), যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত, কিন্তু এর ব্যাপক ব্যবহার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে গুরুতর ‘নৈতিক ঝুঁকি’ (Moral Hazard) বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, এই প্রযুক্তির সহজলভ্যতা জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পকে তাদের কার্যক্রম বজায় রাখতে উৎসাহ দিতে পারে, যা কার্বন নির্গমন হ্রাস করার মৌলিক প্রেরণা কমিয়ে দেবে।
নৈতিক উদ্বেগের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হলো ‘দায়িত্ব ও ন্যায়বিচার’ (Responsibility and Equity)। প্রশ্ন উঠেছে: এই ব্যয়বহুল প্রযুক্তি স্থাপন ও পরিচালনার ব্যয়ভার কে বহন করবে? নৈতিকতা নির্দেশ করে যে, যারা ঐতিহাসিকভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে এবং কার্বন নির্গমনে প্রধান অবদান রেখেছে, তাদেরই এই খরচ বহন করা উচিত।
এছাড়াও, ভূগর্ভস্থ কার্বন স্টোরেজ সাইটগুলির দীর্ঘমেয়াদী তদারকি এবং সম্ভাব্য ফুটো হওয়ার দায়ভার আগামী প্রজন্মের উপর চাপিয়ে দেওয়াটাও এক ধরনের আন্তঃপ্রজন্মীয় অন্যায় (Intergenerational Injustice) হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এছাড়া, পরিবেশগত ন্যায়বিচারের প্রশ্নটিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। DAC (Direct Air Capture) বা CCS পরিকাঠামো স্থাপনের জন্য বিশাল জমি, পানি এবং শক্তির প্রয়োজন হয়। এই শিল্প সুবিধাগুলি প্রায়শই দুর্বল বা প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলির কাছাকাছি স্থাপিত হয়, যা স্থানীয় জনগণের উপর অতিরিক্ত পরিবেশগত বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে।
বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তির ঝুঁকি ও সুবিধাগুলি কেবল প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে, বরং ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার একটি সুসংহত নৈতিক কাঠামোর মাধ্যমে মূল্যায়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
