কার্বনমুক্ত সমুদ্রযাত্রার নতুন জ্বালানি: গ্রিন অ্যামোনিয়া উৎপাদনে ব্রিটেন ও ডেনমার্কের সাফল্য
শিপিং বা সামুদ্রিক পরিবহন শিল্প বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের একটি বড় উৎস। এই খাতকে কার্বনমুক্ত করতে ২০২৫ সালে এক যুগান্তকারী প্রযুক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ‘গ্রিন অ্যামোনিয়া’ ($NH_3$)।

সম্প্রতি ডেনমার্কের রামমে-তে বিশ্বের প্রথম ‘ডায়নামিক’ গ্রিন অ্যামোনিয়া প্ল্যান্ট চালু হয়েছে, যা সরাসরি বাতাস, জল এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে জ্বালানি তৈরি করছে।
একই সময়ে যুক্তরাজ্যে ১.১ বিলিয়ন পাউন্ডের একটি সরকারি প্রকল্পের আওতায় গ্রিন অ্যামোনিয়া প্রোটোটাইপ প্ল্যান্ট তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে, যা বায়ু শক্তির উদ্বৃত্ত অংশকে জ্বালানিতে রূপান্তর করে মজুত রাখতে সক্ষম।1
গ্রিন অ্যামোনিয়া তৈরির প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত আধুনিক। এটি মূলত হাইড্রোজেন এবং নাইট্রোজেনের সংমিশ্রণ। প্রথমে তড়িৎ বিশ্লেষণের (Electrolysis) মাধ্যমে জল থেকে হাইড্রোজেন পৃথক করা হয় এবং বায়ু থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করা হয়।
এরপর হ্যাবার-বশ (Haber-Bosch) পদ্ধতিতে এই দুই উপাদানকে উচ্চ চাপে এবং অনুঘটকের উপস্থিতিতে অ্যামোনিয়ায় রূপান্তর করা হয়। প্রথাগত পদ্ধতির তুলনায় এই নতুন ‘ডায়নামিক’ পদ্ধতিতে সূর্যের আলো বা বাতাসের গতির ওঠানামার সাথে সামঞ্জস্য রেখে উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তিত হয়, যা খরচ কমিয়ে আনে। এর রাসায়নিক সমীকরণটি হলো:
শিপিং সেক্টরের জন্য অ্যামোনিয়া একটি আদর্শ জ্বালানি কারণ এর শক্তি ঘনত্ব (Energy Density) তরল হাইড্রোজেনের চেয়ে অনেক বেশি এবং এটি সাধারণ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় পরিবহন করা সহজ।
ডেনমার্কের এই প্ল্যান্টটি বছরে প্রায় ৫,০০০ টন গ্রিন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করবে, যা ৯,৬০০ টন কার্বন নির্গমন হ্রাস করবে। শিপিং সংস্থাগুলো যেমন মায়েস্ক (Maersk) এবং অন্যান্য বড় জাহাজ নির্মাতারা এখন অ্যামোনিয়া-চালিত ইঞ্জিন তৈরিতে বড় বিনিয়োগ করছে।
এটি কেবল জ্বালানি হিসেবেই নয়, কৃষিক্ষেত্রে কার্বনমুক্ত সার তৈরিতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। তবে অ্যামোনিয়ার বিষাক্ততা একটি চিন্তার বিষয়, যার জন্য জাহাজগুলোতে বিশেষ লিক-প্রুফ স্টোরেজ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে।
২০৩৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন ৮০% কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, তাতে গ্রিন অ্যামোনিয়া ১৫% পর্যন্ত অবদান রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
