দখল–দূষণসহ নানা কারণে নদীগুলো আজ বিপন্ন হচ্ছে: রিজওয়ানা হাসান
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘দখল–দূষণসহ নানা কারণে আমাদের নদীগুলো আজ অনেকাংশে বিপন্ন হচ্ছে। এসব নদীর সুরক্ষায় আমাদের যে ধরনের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন, তা অনেকাংশেই অনুপস্থিত।’
রবিবার সকালে বরিশাল নগরের সদর রোডের বিডিএস মিলনায়তনে বেলা আয়োজিত এক কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা থেকে আসা পরিবেশ ও নদীরক্ষা আন্দোলনের সংগঠক, সচেতন নাগরিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘দখল-দূষণের হাত থেকে আমাদের নদীকে সুরক্ষা দিতে সচেতন নাগরিকদের সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করে নদী সুরক্ষায় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে চাপ বাড়াতে হবে। এ জন্য বেলা সাধ্যমতো আইনি ও অন্যান্য সব সুবিধা দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী রফিকুল আলম বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের পর দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের বিপুল সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। শিল্পায়ন সম্প্রসারিত হলে তা নদীতীরে হবে, সেটা আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি।
এটা হওয়া মানে নদী হত্যার বন্দোবস্ত চূড়ান্ত করা। এ জন্য আগেভাগেই এ অঞ্চলের নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে সেগুলোকে পরিবেশ সংবেদনশীল এলাকা ঘোষণা করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য নদীগুলোর সমীক্ষা সম্পন্ন করে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। অন্যথায় এসব নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।’
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন। এতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাহ মো. রফিকুল ইসলাম, বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ এইচ এম রাশেদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন, জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেন, বরিশালের খাল–নদী রক্ষা কমিটির সংগঠক আনোয়ার জাহিদ, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল মহানগরের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেব হাওলাদার, সাংবাদিক সুশান্ত ঘোষ, ভোলার নাগরিক আন্দোলনের নেতা মোবাশ্বের উল্লাহ, বরগুনার পরিবেশকর্মী মুশফিক আরিফ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সুগন্ধ্যা ও কীর্তনখোলা নদীর মোহনায় দপদপিয়া এলাকায় একটি বড় অংশ দখল করে ওষুধ শিল্পকারখানা ও একটি সিমেন্ট কারখানা করা হয়েছে। এ কারণে নদীদূষণ ও দখল দুটোই ত্বরান্বিত হচ্ছে।
একইভাবে কলাপাড়ার রামনাবাদ, বরগুনার তালতলী এলাকার বিষখালী-পায়রা-বলেশ্বর তিন নদ-নদীর মোহনায় তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করায় ওই এলাকার নদীদূষণ ও পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে।
একইভাবে ভোলায় তিনটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হওয়ায় সেখানে শিল্পায়নের প্রস্তুতি চলছে। এসব বন্ধ না করতে পারলে মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও সন্নিহিত নদীকে সুরক্ষা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বক্তারা আরো বলেন, বরিশাল বিভাগ থেকে দেশের মোট ইলিশের ৬৬ শতাংশের বেশি আহরিত হয়। কিন্তু নদীদূষণ, নাব্যতা হ্রাস ও দখলের কারণে এই উৎপাদন হুমকিতে পড়েছে। কীর্তনখোলার নিচে পলিথিন ও অপচনশীল দ্রব্যের স্তর পড়ে যাওয়ায় খননকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
এসব বন্ধে সরকার, প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। নাগরিকদেরও নদীকে সুরক্ষা ও যত্ন করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। কর্মশালায় এ অঞ্চলের নদী, খাল ও জলাশয় সুরক্ষায় বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রতিনিধিরা।