28 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ১১:৪১ | ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পরিবেশের সাথে মানুষের জীবন-যাপনের একটা যোগসূত্র রয়েছে
পরিবেশ রক্ষা

পরিবেশের সাথে মানুষের জীবন-যাপনের একটা যোগসূত্র রয়েছে

পরিবেশের সাথে মানুষের জীবন-যাপনের একটা যোগসূত্র রয়েছে

অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের ভাবনা এখনও পরিষ্কার নয়। সুন্দর পরিবেশের সাথে মানুষের জীবন-যাপনের যে একটা যোগসূত্র রয়েছে, সেটাও হয়তো আমরা অনুধাবন করতে পারছি না অথবা ভুলে গেছি। পরিবেশ যে আমাদের সবার জন্য অমূল্য সম্পদ সেই চেতনাবোধটাও যেন আজ মৃয়মান।

ময়লা-আবর্জনা আমরা যত্রতত্র ফেলছি, অপরিকল্পিতভাবে মাটি ও পাহাড় কাটছি, অপ্রয়োজনে উচ্চস্বরে হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছি, নির্বিচারে নদী-দীঘি-পুকুরসহ জলাশয়গুলিকে দূষিত, দখল ও ভরাট করছি, জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করছি, ফসলে ও ফলমূলেও মারাত্মক এবং ক্ষতিকর কীটনাশক এবং রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করছি, প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনসমূহ বিনষ্ট করছি, গাছ কাটছি-বনাঞ্চলগুলিকে ধ্বংস করছি, মহাসড়কের পাশে বর্জ্যের পাহাড় গড়ে তুলছি, নদীতে অবাধে বর্জ্য-পলিথিন-প্লাস্টিক ইত্যাদি ফেলছি, যানবাহনে-অফিসে ও জনসমাগমস্থলে ধুমপান করছি, প্রয়োজনীয় সময়ের বাইরে এসি ও বিদ্যুতের সুইচ অন রাখছি, দোকানে-রাস্তায় বড় বড় সাইনবোর্ডে সারারাত ধরে আলো জ্বালিয়ে রাখছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-হাসপাতালসহ বিভিন্ন অফিসে সুষ্ঠুভাবে খাবার পানি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পয়ঃনিস্কাশনের ব্যবস্থা করছি না, শহরে খোলা খেলার মাঠে অন্য স্থাপনা নির্মাণের পাঁয়তারা করছি, বিদ্যালয়ের মাঠে পুকুর খুঁড়ছি, উপকূলের সবুজ বেষ্টনী নষ্ট করছি, চিংড়ি চাষের ঘের তৈরি করে লবণাক্ততা বাড়াচ্ছি, অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি, ইটের ভাটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছি, অনেক শিল্পের বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করছি না, খাবারে ভেজাল দিচ্ছি, হাতির বসতি ও বিচরণক্ষেত্র বিনষ্ট করছি, জীববৈচিত্র্য নষ্ট করছি, পরিবেশ সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে যে সকল সহায়ক আইন হয়েছে সেগুলো ঠিকমতো জানি না, জানলেও হয়তো মানছি না।



এভাবে প্রতিনিয়তই যেন আমরা অপরাধ করে চলেছি। অপরাধ করছি পরিবেশ ও প্রকৃতির কাছে, মানুষের কাছে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে। দিনের পর দিন অপরাধের পাল্লা ভারি থেকে আরও ভারি হচ্ছে, কিন্তু এ সকল অপরাধের বিচার হচ্ছে না। দুঃখের বিষয়, আমরাই সামগ্রিকভাবে আমাদের পরিবেশ ও সম্পদ ক্রমাগতভাবে বিনষ্ট করে চলেছি।

একথা সত্যি যে, আমাদের দেশের সংবিধানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জলবায়ুর অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তবে বেশকিছু মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও জলবায়ুকে জীবনধারণের অধিকারের আওতাভুক্ত বলে গণ্য করেছে।

এছাড়া সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১৮ক নামে নতুন একটি অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে। যেখানে পরিবেশের সংরক্ষণ, পরিবেশের মানোন্নয়ন, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করাকে রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় আমাদের দেশে একগুচ্ছ আইন ও নীতিমালাও রয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলায় ও মেট্রোপলিটন শহরে পরিবেশ আদালত গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু এতকিছুর পরও নির্মল পরিবেশ খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

দেশের একটা সময়ের কথা প্রবীণদের কাছে শুনেছি এবং দীর্ঘসময় গ্রামে থেকে নিজেও দেখেছি যে, নদীর পাড়ে গিয়ে মন জুড়িয়ে যেত, পুকুরে দল বেঁধে সাঁতার কেটে মনে উৎফুল্লতা ও প্রাণবন্ততা কাজ করত, সবুজ বনের মাঝে হারিয়ে যেত মন-প্রাণ, মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত দেখে বুক উল্লাসে ভরে উঠত, অনেক বড় ও পুরোনো গাছের ছায়ায় কত রকমের ও ধরনের খেলা খেলে নির্ভেজাল আনন্দ হতো, কত রকমের মাছ খাওয়া, গাছ থেকে পেড়ে নানারকমের ফল খাওয়া, নিজের হাতে ফুল ও ফসলের বাগান গড়ে তোলা, কত রকমের জীবজন্তু দেখে আনন্দ পাওয়া, পরিবেশ ও প্রকৃতিকে নিয়ে গান ও কবিতা লেখা আরও কত কী! কিন্তু আজ সেই পরিবেশ ও প্রকৃতি কোথায়? কতটুকুই বা আছে?

ধীরে ধীরে পরিবেশের সেই স্বাভাবিক চিত্র যেন পাল্টে যাচ্ছে। কেমন যেন অদ্ভুতভাবে বদলে যাচ্ছে চারপাশ। প্রকৃতি ও পরিবেশের মূল্যবান সম্পদগুলি যেন এখন হুমকির মুখে।



এজন্য নানা পরিসরে আলোচনা হচ্ছে, র‌্যালি হচ্ছে, সমাবেশ হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে, প্রতিবাদ ও আন্দোলন হচ্ছে, হচ্ছে আরও কত কী! কিন্তু চরম অপরাধী, লোভী ও স্বার্থান্ধ সেই কুৎসিত রুচিবোধসম্পন্ন মানুষগুলোর সাথে সবসময় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো, পরিবেশ সচেতন মানুষগুলো পেরে ওঠেনি, কিংবা সবসময় বা সবক্ষেত্রে পেরে উঠতে পারছে না।

কৃত্রিম জীবন এখন শুধু নগরে নয় গ্রামেও পৌঁছে গেছে। তাই সুস্থ জীবন এখন বিপন্ন। নিজের জন্য কোন কিছু বানানোর নিমিত্তে অন্য কোন কিছু ধ্বংস করে দেবার অভ্যাস মানুষের আছে, আর এটাই এখন বেশি ঘটছে। এই অতিরিক্ত লোভই এখন প্রকৃতির প্রধান শত্রুতে পরিণত হয়েছে।

মানুষ আসলে যখন থেকে আধুনিক সভ্যতার সন্ধান পেয়েছে, তখন থেকেই এক ধরনের অবিবেচনাপ্রসূত প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনাশের পথে ছোটাছুটি করছে। কিন্তু এতে বাস্তুসংস্থানের (ইকোলজি) ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং মানবসভ্যতা ধ্বংসের পথে অগ্রসর হচ্ছে।

ফলে এখন পাহাড়-বনাঞ্চলসহ প্রাকৃতিক সম্পদ দখল ও ধ্বংসকারী, ভূমি-নদী-জলাশয় দস্যু, বৃক্ষ ও প্রাণী নিধনকারী, মাঠ দখলকারী, দেশের ঐতিহ্য বিনষ্টকারী এমন সব বিরোধী শক্তির মোকাবিলায় আমাদের প্রয়োজন হবে ব্যাপক মাত্রায় পরিবেশ সচেতনতা। ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজন হবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের।

প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনাশী কর্ম থেকে বিরত থাকতে আমাদের নীতি-নির্ধারকরা যেন বাধ্য হন, সেদিকে সরকারকে যেমন কঠোরভাবে ভাবতে হবে, একইসাথে স্ব স্ব অবস্থান থেকে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সমন্বিত সকল প্রয়াসকেও সজাগ থেকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে যেতে হবে।

প্রকৃতির কোন ক্ষতি করে, পরিবেশ বিনষ্ট করে ভাল থাকা যায় না, সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করাও সম্ভব নয়। মানুষের যেমন মূল্য আছে, পরিবেশেরও তেমনি মূল্য আছে। ঠিক তেমনি মানুষের যেমন অধিকার আছে, পরিবেশেরও অধিকার রয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ অনেক ক্ষেত্রে মানুষের আচরণ ভঙ্গের কারণে অন্য মানুষ ক্ষতির শিকার হলে, সেটাকে মানবাধিকার দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা হয়। ঠিক সেভাবেই মানুষেরই আচরণগত কারণে যদি পরিবেশের কোন ক্ষতি হয়, তাহলে সেটাকেও পরিবেশের অধিকার ভঙ্গের সামিল হিসেবে বিবেচনা করাটা একান্ত জরুরি। তাই পরিবেশের সঙ্গে আমাদের নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। মানবাধিকার নীতি পরিবেশের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করাটাও এজন্য খুব জরুরি হবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত