29 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ৯:৫৪ | ২রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
বাংলাদেশের শালবনে ফিরছে ময়ূর, প্রকৃতির কাছে ফেরার এক সাহসী পদক্ষেপ
পরিবেশ বিশ্লেষন প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রাণী বৈচিত্র্য বাংলাদেশ পরিবেশ

বাংলাদেশের শালবনে ফিরছে ময়ূর: প্রকৃতির কাছে ফেরার এক সাহসী পদক্ষেপ

বাংলাদেশের শালবনে ফিরছে ময়ূর: প্রকৃতির কাছে ফেরার এক সাহসী পদক্ষেপ

দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বনে ময়ূরের উপস্থিতি ছিল শুধুই ইতিহাসের অংশ। রাজসিক সৌন্দর্যের এই পাখি একসময় ছিল দেশের নানা অঞ্চলে প্রচলিত দৃশ্য, কিন্তু নগরায়ন, বনভূমি নিধন ও নির্বিচারে শিকারের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (IUCN) বাংলাদেশের যে লাল তালিকা প্রকাশ করে, তাতে ময়ূরকে ‘বিলুপ্ত’ (Extinct in the Wild) প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এই হতাশাজনক বাস্তবতার মাঝেই সম্প্রতি আশার আলো জ্বালিয়েছে একটি মহৎ উদ্যোগ। গত ২৬ মে, 2025 টাঙ্গাইলের মধুপুর শালবনের দোখলা রেঞ্জের লহরিয়া বিটে অবমুক্ত করা হয়েছে পাঁচ জোড়া ময়ূর। এই ময়ূরগুলো প্রথমে বনের পরিবেশে মানিয়ে নিতে প্রশিক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে যাবে। এর পর ধাপে ধাপে তাদের পুরোপুরি মুক্তভাবে বনে বিচরণ করতে দেওয়া হবে।

এই কার্যক্রমের সূচনা করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সঙ্গে ছিলেন জীববিজ্ঞানী ড. রেজা খান, পাখিবিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক ও পরিবেশ আন্দোলনের আরও অনেক কর্মী। তাঁরা সবাই একমত যে এই উদ্যোগ কেবল ময়ূরের ফিরে আসা নয়, বরং সমগ্র পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার পুনর্গঠনের অংশ।

পাখিবিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক জানান, কৃত্রিম প্রজননকেন্দ্র বা চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া ময়ূর যখন বনে ছাড়া হয়, তখন তারা শত্রু চিনতে পারে না। ফলে বেঁচে থাকার জন্য তাদের বিশেষভাবে প্রস্তুত করতে হবে। যেমন, রাতে গাছে উঠা, শিকারী প্রাণীর শব্দ শনাক্ত করা ও নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। বনের চারপাশে ক্যামেরা বসিয়ে ও স্যাটেলাইট ট্যাগ ব্যবহার করে তাদের আচরণ ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করাও জরুরি।

বাংলাদেশে আগে দুটি প্রজাতির ময়ূর দেখা যেত—ভারতীয় ময়ূর এবং সবুজ ময়ূর। ভারতীয় ময়ূর দেশের সমতল ভূমিতে ছিল সাধারণ এবং এটিই ভারতের জাতীয় পাখি। সবুজ ময়ূর, যা বিশ্বব্যাপী এখন বিপন্ন, একসময় পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখা যেত। আজ তারা উভয়ই বন্য প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত।

তবে সীমান্তবর্তী পঞ্চগড়ের দর্জিপাড়া গ্রামে মাঝেমধ্যেই ভারতের বনাঞ্চল থেকে ময়ূর এপারে আসে। স্থানীয়রা তাদের বিরক্ত না করে সহাবস্থানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আলোকচিত্রীরা গত কয়েক বছর ধরে দর্জিপাড়ায় একাধিক ময়ূরের ছবি তুলেছেন। ধারণা করা হয়, চার থেকে পাঁচটি ময়ূরের একটি দল এই এলাকায় খাবারের সন্ধানে আসে এবং পরে আবার ফিরে যায়।

এই বাস্তবতা দেখিয়ে দেয়, এখনো দেশের কিছু এলাকায় ময়ূর ফিরিয়ে আনার উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মধুপুরের পাশাপাশি পঞ্চগড়ও হতে পারে একটি সম্ভাবনাময় স্থান, যেখানে রোগমুক্ত ময়ূর ছাড়া হলে তারা প্রাকৃতিক পরিবেশে দ্রুত খাপ খেয়ে নিতে পারবে।

বাংলাদেশের শালবনে ময়ূরের প্রত্যাবর্তন কেবল একটি প্রজাতির পুনরুদ্ধার নয়, এটি আমাদের পরিবেশবিষয়ক সচেতনতার প্রতীক। একশ বছর আগে যে রমনা পার্ক বা সাভারে ময়ূর ছিল, আজকের প্রজন্মের জন্য সে দৃশ্য হয়তো স্বপ্নের মতো। তবে এই উদ্যোগ প্রমাণ করে—প্রকৃতির কাছে ফেরা অসম্ভব নয়, যদি থাকে ইচ্ছা, উদ্যোগ এবং সহানুভূতির মনোভাব।

এখন সময়, আমরা সবাই মিলে ময়ূরের এই প্রত্যাবর্তনকে সফল করতে এগিয়ে আসি। বনকে নিরাপদ করি, শিকার বন্ধ করি এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সৌহার্দ্য গড়ে তুলি। ময়ূরের কলতান ফিরে আসুক আমাদের সবুজ বাংলায়।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত