বাতাস বিশুদ্ধ করে চলেছে ‘ভার্টো’ টাওয়ার
বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহরের একটি পার্কে গত গ্রীষ্ম থেকে নিবিড়ভাবে চারপাশের বাতাস বিশুদ্ধ করে চলেছে একটি মসৃণ ফিল্টার বা বায়ু পরিশোধন ‘টাওয়ার’, যা পরিচিত ভার্টো নামে।
১৮ ফুট দীর্ঘ এই স্থাপত্য যন্ত্রটি বসানো হয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লির সুন্দর নার্সারি নামের সেই পার্কে। বাতাসে নাইট্রোজেন ও বিপজ্জনক সূক্ষ্ম কণার মাত্রা কমিয়ে এটি চারপাশের বাতাসকে বিশুদ্ধ করে তুলছে। দিনে ৬ লাখ ঘনমিটার বায়ু বিশুদ্ধ করছে এই টাওয়ার, যা ২৭৩টি উষ্ণ বায়ু বেলুনের সমান।
এখন এই যন্ত্র ব্যবহারে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে স্থপতিরা ধারণা করছেন, বড় জনসমাগমপূর্ণ এলাকা, আশেপাশের অন্যান্য এলাকা এমনকি পুরো শহরে বায়ু বিশুদ্ধ করার জন্য এই প্রকল্পটি বড় করা যেতে পারে।
এই টাওয়ারের নির্মাতা স্থাপত্য ফার্ম ‘স্টুডিও সিমবায়োসিস’। ভারত ও জার্মানিতে তাদের অফিস রয়েছে। তাদের এই টাওয়ারগুলোতে একটি জ্যামিতিক শেলের ভেতরে পাঁচটি বায়ু ফিল্টার কিউব রয়েছে।
ফার্মের সহপ্রতিষ্ঠাতা দম্পতি অমিত ও ব্রিটা নোবেল গুপ্ত বলেন, ফ্যানচালিত তাদের এই যন্ত্র আবদ্ধ জায়গার ৬৫৬ থেকে ১ হাজার ৬৪০ ফুট ব্যাসার্ধ পর্যন্ত বায়ু পরিষ্কার করতে পারে।
আর বাইরে খোলা জায়গায় এটি ৩২৮ ফুট থেকে ১ হাজার ১৪৮ ফুট জায়গা জুড়ে বায়ু পরিশুদ্ধ করতে পারে। কতটুকু জায়গা জুড়ে এটি কাজ করবে, তা নির্ভর করে বাতাসের গতি আর সেই এলাকাটি কেমন তার ওপর।
দিল্লি থেকে অমিত বলেন, এই যন্ত্র ব্যবহারে প্রাথমিক এই ফলাফলই আমরা আশা করছিলাম। এগুলো আরও বসানোর জন্য আমরা সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।
এই বায়ু পরিশোধন টাওয়ার ভারতের দূষণ কমাবে?
তিনি জানান, এ প্রকল্পে সাফল্য পাওয়ায় ইতোমধ্যে স্টুডিও সিমবায়োসিস উজবেকিস্তান থেকে শুরু করে ফ্রান্স ও নিউজিল্যান্ডের সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি তাদের অবকাঠামো নির্মাণ সাইটে ধুলো ও সূক্ষ্ম কণা প্রতিরোধে প্রায় ৪০টি টাওয়ারের অর্ডার দেওয়ার কথা ভাবছে।
“আমি মনে করি, এই টাওয়ারগুলো পাবলিক পার্ক বা পাবলিক প্লাজাগুলোতে বসানো যেতে পারে, যেখানে বেশিরভাগ সময় মানুষ থাকে। এছাড়া ঘরহীন লোকেরা যেখানে ঘুমায়, সেখানে এটি বসানো গেলে তারা অবশ্যই উপকার পাবে”, বলেন ব্রিটা নোবেল গুপ্ত।
ল্যাটিন শব্দ ‘ভার্টেন্ট’ থেকে এই টাওয়ারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভার্টো’। টাওয়ারের পৃষ্ঠের দিকে যতটা সম্ভব বাতাস ঠেলে দেওয়ার জন্য এর মোচড় দেওয়া নকশা করা হয়, যেখানে এটি বাতাস শুষে ফিল্টারে নেয় এবং তারপর সেটিকে বের করে দেয়।
অমিত বলেন, এটি পুরোটাই বাতাসের গতি সম্পর্কিত বিষয়। ফলে তারা গাড়ির স্পয়লারসহ জেট বিমান ও এর প্রপেলার ইঞ্জিন কীভাবে কাজ করে, সেই বিষয়টিতে নজর দিয়ে এই টাওয়ার তৈরি করেন। ছোট ছোট অংশ সংযুক্ত করে বানানো এই টাওয়ার কীভাবে অধিক অ্যারোডাইনামিক হয়ে ওঠে তা ব্যাখ্যা করেন তিনি।