‘ম্যাঙ্গানিজ নাজু ’ এর ফলে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পরিবেশকর্মীরা
লাখ লাখ বছর ধরে সমুদ্রের তলদেশে পড়ে আছে ‘ম্যাঙ্গানিজ নাজুল’। এই পাথরে ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্টের মতো মূল্যবান ধাতু রয়েছে। তাই এনার্জি ট্রানজিশন বা শক্তির উৎস হিসেবে এই পাথর প্রয়োজন বলে মনে করে একটি পক্ষ।
তবে এর ফলে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পরিবেশকর্মীরা। সাগরের প্রায় পাঁচ হাজার মিটার গভীরে অনেক প্রাণী বাস করে। এদের অনেকের আবাসস্থল ম্যাঙ্গানিজ নাজুল নামের পাথর। কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে বিভিন্ন প্রাণীর আবাস হয়ে আছে এসব পাথর।
জার্মানির জিওমার হেল্মহলৎস সেন্টার ফর ওশান রিসার্চের বিজ্ঞানীরা বেলজিয়ামের একটি খনি কোম্পানির ব্যবহার করা জায়গা পরীক্ষা করে দেখেছেন, সেখানে প্রায় কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
না ম্যাঙ্গানিজ নাজুল আছে, না কোনো প্রাণীর চিহ্ন। মেরিন বায়োকেমিস্ট মাটিয়াস হ্যাকেল জানান, ‘কোরাল ও স্পঞ্জের মতো প্রাণীর বসবাসের জন্য ম্যাঙ্গানিজ নাজুল পাথর প্রয়োজন।
আবার এই প্রাণীগুলো ব্রিটল স্টার ও কোপোপডের মতো সামুদ্রিক প্রাণীর থাকার ব্যবস্থা করে। ফলে কয়েক মিলিয়ন বছরের জন্য আমরা তাদের হারিয়ে ফেলতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব খনন অনেক বড় আকারে হয়ে থাকে। বছরে কয়েকশ বর্গকিলোমিটার এলাকা খনন করা হয়। সে কারণে অনেক প্রজন্মের জন্য এই প্রাণীগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।’
শিল্প খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি, এনার্জি ট্রানজিশনের জন্য এই পাথর প্রয়োজন। কারণ ম্যাঙ্গানিজ ছাড়াও এর মধ্যে তিনটি মূল্যবান ধাতু আছে– কোবাল্ট, নিকেল ও তামা। ভূমিতে যা আছে, তার চেয়ে তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের কর্মকর্তা ফ্রান্সিসকা সালমান বলেন, ‘গভীর সমুদ্রে খনন, খননের বিকল্প হয়ে উঠবে না। কিন্তু যেটা হবে তা হলো, পরিবেশের পাশাপাশি আমরা সাগরও ধ্বংস করা শুরু করব।’
সাগরে ম্যাঙ্গানিজ নাজুলের পরিমাণ ঝুঁকির মুখে আছে। কারণ এরই মধ্যে ‘ক্ল্যারিয়ন ক্লিপার্টন জোন’ এলাকায় অনেক দেশ খনন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটি ইতোমধ্যে খননের অনুমতিও দিয়েছে।
জার্মানির পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সেবাস্টিয়ান উঙ্গার বলেন, ‘মেরিটাইম আইন অনুযায়ী, গভীর সমুদ্রে খনন করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে সমুদ্রের পরিবেশের ভয়াবহ কোনো ক্ষতি হবে না – এমন শর্ত মানতে হয়। কিন্তু অনেক বছর ধরে আমরা যে গবেষণা করছি তাতে দেখা যাচ্ছে, এমন ক্ষতির শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
সে কারণে গবেষকদের সবুজ সংকেত না পাওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের খনন পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে চায় জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো আরও কয়েকটি দেশ। এর জন্য কয়েক প্রজন্ম অপেক্ষাও করতে চায় তারা।
গভীর সমুদ্র-অক্ষত ইকোসিস্টেম, নাকি পরবর্তী পরিবেশ দুর্যোগ– ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটির ওপর এর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। জার্মান খনিজ সম্পদ সংস্থার মতো বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, আগামী কয়েক দশকে ধাতুর চাহিদা অনেক গুণ বাড়বে।
তবে কিছু ধাতু রিসাইকেল করা যেতে পারে বা একেবারে বদলে ফেলা যেতে পারে। গ্রিনপিসের ফ্রান্সিসকা সালমান বলেন, ‘প্রযুক্তি এত এগিয়েছে যে, আমরা এখন কোবাল্টমুক্ত ব্যাটারি তৈরি করছি। তাই এনার্জি ট্রানজিশনের জন্য গভীর সমুদ্রে খননের প্রয়োজন নেই।’