সোনার গ্রহানু “সাইকাই” তে নাসার ২০২২ সালে অভিযানের পরিকল্পনা
সোনার প্রতি দূর্বলতা নাই পৃথিবীতে এমন মানুষ পাওয়া ভার । প্রত্যেকই ভাবে যদি প্রচুর প্রচুর সোনার মালিক হওয়া যেত তবে তার জীবন সার্থক হত। আর নারীদের কাছে সোনাতো তার সৌন্দর্যের প্রতীক, তার অবলম্বন, আহা যদি সারা গাঁ সোনা দিয়ে মুড়িয়ে থাকত! আহ্!
গত কয়েক দিন হতে বিশ্বে আবার সোনার দাম দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী । বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে গত একমাসর মধ্যে আমাদের দেশে সোনার দাম প্রায় ১৯/২০ হাজার টাকা ভরিতে বেড়েছে। কিন্তু যদি এমন হয় হঠাৎ হাজার হাজার টন সোনা অন্য গ্রহ বা গ্রহানু হতে পৃথিবীতে এসে পড়ে, তবে কি হবে? সোনার দামের কি হবে? নিশ্চয় ধপাস করে পড়ে যাবে। চাহিদার তুলণায় যদি সরবরাহ বেশী হয়, তবে দাম পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক – ইহাই অর্থনীতির মূল সূত্র।
তবে এত সোনা হঠাৎ করে অন্য গ্রহ বা গ্রহানু হতে আসলে আসার কোন সম্ভবনা আছে কি না? হাঁ, সম্ভবনা রয়েছে।
নাসার বিজ্ঞাণীরা এমন একটি গ্রহানুর সন্ধান পেয়েছে। গ্রহানুটির নাম সাইকাই (Psyche)। মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহ দু’টির মধ্যস্থানে ইহার অবস্থান এবং সূর্য্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করছে। ইহার প্রশস্ততা ১৯৩ কিলোমিটার এবং সোনা, প্লাটিনাম, লোহা এবং নিকেলে ভরপুর। যাতে এমন পর্যাপ্ত পরিমান স্বর্ণ রয়েছে যা দ্বারা পৃথিবীর প্রত্যেককে বিলিয়নিয়ার বানানো যাবে।
নাসা বিলিয়নিয়ার এলন মাস্ককে নিকটবর্তী গ্রহাণুটি ঘুরে দেখার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে।

সামগ্রিকভাবে, অনুমান করা হয় যে, গ্রহানুটির বিভিন্ন ধাতবসমূহের মূল্য সত্যি অকল্পণীয় ও ভয় পাওয়ার মত (mind-boggling), $১৫.৮ কোয়াড্রিলিয়ন (১৫৮০০০০০০০০০০০০০০০০০বা ১৫.৮X ১০১৮ ইউএস ডলার)। এর অর্থ এটি যদি পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়, তবে এটি বিশ্বের অর্থনীতির পতন ঘটার কারণ হবে।
বিলিয়নিয়ার মাস্কের একটি রকেট তৈরির সংস্থা রয়েছে, যার নাম স্পেসএক্স (SpaceX)। ২০২২ সালের প্রথম দিকে স্পেসএক্স নাসার সাথে শক্ত ধাতুর গ্রহানুটির উদ্দেশ্যে ১৬- সাইক (16 Psyche) নামে – একটি সজ্জিত মহাকাশযান অভিযানে অংশ নিবে।
অতি মূল্যবান ধাতব দ্বারা নির্মিত গ্রহানু সাইককে আমাদের সৌরজগতের তৈরী একটি অন্যতম ব্লক হিসাবে মনে করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, যখন সৌরজগত তৈরি হয়েছিল, তখন গ্রহানুসমূহের পারস্পারিক সংঘর্ষের ফলে তৈরী হয়েছিল। নাসার বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে যে, সাইক গ্রহানুটি সেই সংঘর্ষের হাত থেকে বেঁচে গেছে। এর অর্থ হ’ল পৃথিবীর মূল এবং অন্যান্য গ্রহের কোরগুলি কীভাবে তৈরি হয়েছিল তা আমরা এটি হতে জানতে পারব।
সবকিছু ঠিকঠাক হলে ’১৬ সাইক’ মিশনটি ২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ কানাভেরাল থেকে শুরু করা হবে।
এতদ্ উদ্দেশ্যে স্পেসএক্স ফ্যালকন রকেটটি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের জন্য প্রচুর সরবরাহসহ গত ০৬ মার্চ, ২০২০ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ কানাভেরাল থেকে যাত্রা করল।

এই অভিযানটি পরিচালিত হবে মূলত গ্রহাণুটি কি দিয়ে তৈরি তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য, কোন খনি করার পরিকল্পনা এবার নাই। আশা করা যাচ্ছে যে, ২০২৬ সালে অনুসন্ধানটি ধাতব খণ্ডে পৌঁছে যাবে।

ইউরোসান মাইনিং নামক একটি খনির প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় স্কট মুর বলেছেন যে, গ্রহাণুগুলিতে স্বর্ণের পরিমাণ স্বর্ণের শিল্পকে বিশৃঙ্খলায় ফেলে দিতে পারে।
তিনি খনির এবং জ্বালানি সংক্রান্ত নিউজ সাইট ’অয়েল প্রাইস ( The Oil Price) কে বলেছেন, “’সোনার টাইটানস ’এখন বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক উৎপাদনকারী কয়েকশ সম্পত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে তারা প্রতিবছর চার থেকে পাঁচ মিলিয়ন আউন্স সোনার বাজারে আনতে পারে যা মহাকাশে পাওয়া স্বর্ণের তুলনায় তুলনামূলকভাবে নিতান্তই কম।”

২০১৫ সালে গ্রহাণুটির মালিকানা আইনী করার পরে দুটি স্পেস মাইনিং সংস্থা একটি সোনার খনি হতে পৃথিবীতে স্বর্ণ আনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ডিপ স্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ এবং প্ল্যানেটারি রিসোর্স প্রত্যেকের নজর ২০১১ ”ইউডাব্লু ১৫৮ (UW158 asteroid)” গ্রহাণুর প্রতি, যা লন্ডন টাওয়ার, ইউকে এর আকারের দ্বিগুণ এবং যার মূল্য ৯ ইউএস ট্রিলিয়ন ডলার।
Source: The Sun and KIDSNEWS