পরিবেশের ক্ষতি কমাতে গঙ্গা অববাহিকায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিতে হবে
গঙ্গা অববাহিকায় থাকা দেশগুলো এখন পর্যন্ত জীবাশ্ম জ্বালানির দিকে জোর দিচ্ছে। কয়লা ও তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও এই অববাহিকাজুড়ে পানিবিদ্যুৎকেন্দ্র ও সেচের জন্য বিপুল পরিমাণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
যা দীর্ঘ মেয়াদে এই অববাহিকার পানি ও জীববৈচিত্র্য এবং সামগ্রিকভাবে এখানকার অধিবাসীদের ক্ষতি করছে। কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিলে এই ক্ষতি কমানো যাবে।
রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন বাংলাদেশ এবং এশিয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ যৌথভাবে বৈঠকটির আয়োজন করে।
গঙ্গা অববাহিকার অধিবাসীদের জন্য টেকসই ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা তৈরির জন্য এ আয়োজন করা হয়। এতে দেশের শীর্ষ জ্বালানি, নদী, জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জ্বালানিশক্তির ২৬ শতাংশ আসে কাঠ, গোবর, পাতা ও খড়ের মতো জৈব উৎস থেকে।
আর গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ এ ধরনের উৎস থেকে তাদের জ্বালানির চাহিদা মেটান। আর জাতীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অর্ধেক আসে গ্যাস থেকে, ২০ শতাংশ পেট্রোলিয়াম, ১১ শতাংশ কয়লা, ১২ শতাংশ এলএনজি, ৪ শতাংশ এলপিজি, সৌরবিদ্যুৎ ১ শতাংশ, দশমিক ২ শতাংশ জলবিদ্যুৎ ও বাকি ২ শতাংশ আমদানি থেকে আসে।
বদরুল ইমামের উপস্থাপনায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্যাসের সরবরাহ কমে আসার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এলএনজি আমদানি হচ্ছে। কিন্তু এর দামও দ্রুত বাড়ছে।
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণকারী কয়লা বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তার উল্টো ঘটনা ঘটছে। দেশে পায়রা, মাতারবাড়ী ও রামপালের মতো একের পর এক কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হচ্ছে। যা বাংলাদেশ থেকে কার্বন নিঃসরণ আরও বাড়িয়ে দেবে।
বদরুল ইমাম বলেন, বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সেটা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং ভূরাজনীতির দিক থেকে টেকসই হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তার মোট জ্বালানি চাহিদার ৪০ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার অগ্রগতি খুবই কম।
সভায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম তামিম বলেন, বাংলাদেশের গঙ্গা অববাহিকার উজানে ভারত ৮০টি বাঁধ তৈরি করেছে। যার মধ্যে অনেকগুলো হচ্ছে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র।
অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীন চারটি বড় বাঁধ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। ভারতও সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে। এই সবগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হলে গঙ্গার মতো ব্রহ্মপুত্রের জন্য পানিপ্রবাহ কমে আসবে।
অন্যদিকে কৃষিজমি ও নদীর মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ করার মতো জায়গাও আমাদের কম। ফলে বাংলাদেশকে বড় বড় ভবন এবং স্থাপনার ছাদে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র করতে হবে।
আর দেশের বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র সামনে রেখে তারপর নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র আদৌ দরকার কি না, তা দেখতে হবে।
আইউসিএন, বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাকিবুল আমিন বাংলাদেশের আগামী দিনের জ্বালানি শক্তির উৎস হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির নতুন নতুন উৎস খুঁজে বের করার ওপরে জোর দেন। একই সঙ্গে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে গবেষণা বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)–এর সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল নদীপ্রবাহ এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে কোনো ধরনের কয়লা বা জলবিদ্যুৎকেন্দ্র না করার পক্ষে মত দেন।