সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষায় পর্যটকদের ‘সিংগেল ইউজ’ প্লাস্টিক নিতে দেওয়া হবে না: পরিবেশমন্ত্রী
সুন্দরবনে পর্যটকদের ‘একবার ব্যবহারযোগ্য’ বা ‘সিংগেল ইউজ’ প্লাস্টিক সামগ্রী নিতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
রবিবার পরিবেশ অধিদপ্তরে এক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘সিংগেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহারের কারণে সেখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে সুন্দরবনে পর্যটকদের জন্য সিংগেল ইউজ প্লাস্টিক সামগ্রী নিতে দেওয়া হবে না।’
সুন্দরবনে ‘সিংগেল ইউজ প্লাস্টিকে’র ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশনাও দেন মন্ত্রী। তিনি জানান, দেশের উপকূলীয় ১২টি জেলার ৪০টি উপজেলায় সিংগেল ইউজ প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার জানান, প্রতিবছর গড়ে প্রায় দেড় লাখ পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করে। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুন্দরবন ভ্রমণ করেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৯ জন পর্যটক। এর মধ্যে দেশি পর্যটক ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৬২ জন এবং বিদেশি পর্যটক ছিলেন ২ হাজার ৩১৭ জন। এই খাত থেকে বন বিভাগের ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ ও অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন।
সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা এসডো-র এক জরিপে জানা গেছে, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে সিংগেল ইউজ প্ল্যাস্টিক থেকে ১৪ হাজার ১৬৫ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে, যার ৩ হাজার ৭৬ টন উৎপন্ন হয়েছে শুধু ঢাকা শহরে।
বেসরকারি আরেকটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, প্রতি মাসে শহরগুলোতে ৬৬ হাজার টন প্ল্যাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে একবার ব্যবহৃত ও বহুবার ব্যবহৃত দুই ধরনেরই প্ল্যাস্টিক পণ্য রয়েছে। ২০১৯ সালে দেশের শহরগুলোতে সর্বমোট প্ল্যাস্টিকের বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টন।
‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক এক সেমিনারে গত ফেব্রুয়ারিতে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘টেকসই প্ল্যাস্টিক ব্যবস্থাপনা অ্যাকশন প্ল্যান অনুসরণ করে ২০২৬ সালের মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
এছাড়া ২০৩০ সনের মধ্যে প্ল্যাস্টিক বর্জ্য পুনঃব্যবহার ৮০ শতাংশে উন্নীত করা এবং এ সময়ে প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি ৩০ শতাংশে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
তিনি জানান, ‘সরকার উপকূলীয় এলাকায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক ব্যবহার বন্ধে তিন বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং সেখানে পরিবেশবান্ধব ও জৈবপচনশীল বস্তুর ব্যবহার বাড়ানো হবে।’
উপকূলীয় এলাকায় প্ল্যাস্টিক বর্জ্য দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রাণীবিজ্ঞান সমিতি ও নেচার কনজারভেশন সোসাইটির এক অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপমন্ত্রী উপকূলীয় এলাকায় প্ল্যাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিকের কারণে সমুদ্র ও জলাশয় দূষিত হয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে সরকারের এখনও তেমন পরিকল্পনা নেই। আমাদের জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। এখনও সময় আছে। জনগণকে সতর্ক করা গেলে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত প্ল্যাস্টিক দূষণ আমরা কমিয়ে আনতে পারি।’