30 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ২:৩৮ | ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পরিবেশের জন্য বড় হুমকি ই-বর্জ্য
পরিবেশ দূষণ

পরিবেশের জন্য বড় হুমকি ই-বর্জ্য

পরিবেশের জন্য বড় হুমকি ই-বর্জ্য

ই-বর্জ্য সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। আবার যাদের ধারণা আছে, তাদের অনেকেই বিষয়টিকে খুব সহজভাবে নিচ্ছেন। এটি যে পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য মারাত্মক হুমকি তা হয়তো অনেকেরই অজানা।

অজানা রয়েছে এর প্রভাবে মানুষের মৃত্যুও ঘটতে পারে সেই তথ্যও। ই-বর্জ্যরে ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানার আগে আমরা জেনে নেই এটি আসলে কী ধরনের বর্জ্য।

ই-বর্জ্য হচ্ছে ইলেকট্রনিক বর্জ্য। যেমন-পরিত্যক্ত টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, এয়ারকন্ডিশনার, মাইক্রোওভেন, সিএফএল বাল্ব, ওয়াশিং মেশিন, মুঠোফোন, ডিভিডি প্লেয়ার, ইলেকট্রনিক খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি।

এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যবহারের পর যখন নষ্ট হয়ে যায়, তখনই এটি বর্জ্যে পরিণত হয়, যা ই-বর্জ্য নামে পরিচিত। সাধারণ দৃষ্টিতে এগুলোকে চিরাচরিত বর্জ্য মনে হলেও আসলে কিন্তু তা নয়। ই-বর্জ্যরে রয়েছে মারাত্মক রেডিয়েশন, যা বিভিন্নভাবে পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে।



বিশেষ করে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক সামগ্রীতে নানা ধরনের উপাদান থাকে। যেমন-ক্যাডমিয়াম, লিডঅক্সাইড, সিসা, কার্বন, সিলিকন, বেরিলিয়াম, ফাইবার গ্লাস, পারদসহ নানা ধাতব উপাদান। ইলেকট্রনিক সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেলেও উপাদানগুলো নিঃশেষ হয় না, বর্জ্যরে মধ্যেই থেকে যায়।

এগুলো পচনশীল নয় বিধায় পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতি করে। ফলে মাটি, গাছপালা, ফসল ও জীববৈচিত্র্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এ প্রভাবের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তনও ঘটতে থাকে ধীরে ধীরে।

আমরা দেখতে পাচ্ছি, পুরোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী যখন ভাঙারির দোকানে স্থান পায়, তখন দোকানির প্রয়োজনে এ বর্জ্যগুলোকে রোদের তাপে শুকিয়ে নেওয়া হয়। অথবা অনেকে বর্জ্যগুলোকে দোকানে না রেখে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। আর বিপদ তখনই ঘটতে থাকে।

রোদের তাপে ‘ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট’, যেটি আমাদের কাছে ‘আইসি’ নামে পরিচিত, তা থেকে মারাত্মক বিকিরণ নির্গত হতে থাকে। শুধু রোদেই নয়, এটি মাটির নিচে চাপা দিলে কিংবা পানিতে ফেলে দিলেও ক্ষতিকর বিকিরণ নির্গত হতে থাকে।

শুধু তা-ই নয়, এক চা-চামচ পরিমাণ পারদ ২০ একরের একটি জলাশয়ের পানি আজীবনের জন্য ব্যবহারের অনুপযোগী করে ফেলতে পারে। আর যত্রতত্র ফেলে রাখার কারণে ই-বর্জ্যরে রেডিয়েশন রিসাইকেলের মাধ্যমে মানবদেহে দ্রুত প্রবেশ করে। এটি মানুষের ত্বক, কিডনি, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, যকৃত, মায়েদের স্তন ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষায় জানা যায়, দেশে বছরে প্রায় ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে জাহাজভাঙা থেকেই উৎপাদন হচ্ছে ৮০ শতাংশ বর্জ্য, বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও মুঠোফোন সেট থেকে বেশি ই-বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে।



আমাদের দেশে ই-বর্জ্যরে রিসাইক্লিং ব্যবস্থা না থাকায় এসব বিষফোঁড়ায় পরিণত হচ্ছে। অথচ উন্নত বিশ্বে রিসাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও অনেকে কৌশলে দরিদ্র দেশে ই-বর্জ্য পাঠিয়ে দিচ্ছে। তাদের ইলেকট্রনিক পণ্যসামগ্রী একটু নষ্ট হলে কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সেটি মেরামত না করেই বাড়ির সামনের ডাস্টবিনে ফেলে রাখে।

আর সেগুলো দরিদ্র দেশের লোকেরা কুড়িয়ে সামান্য মেরামত করে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়। অনেক সময় মেরামতেরও প্রয়োজন পড়ে না। যারা এমনটি করছেন, তারা ঘুণাক্ষরেও টের পাচ্ছেন না দেশের মানুষের কী ক্ষতি করছেন তারা। শুধু কুড়িয়ে পাঠানোই নয়, অনেক ক্ষেত্রে কম্পিউটার কিংবা অন্যান্য ইলেট্রনিক সামগ্রীর খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করা হচ্ছে, যা থাকে মেয়াদোত্তীর্ণ।

অথচ সেসব পণ্যসামগ্রী আমাদের দেশে দিব্যি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রভাবে ধীরে ধীরে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে, জলবায়ুরও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে, যা আমরা তাৎক্ষণিকভাবে টের পাচ্ছি না। ই-বর্জ্যরে দূষণ অনেকটা মোবাইল ফোন টাওয়ার থেকে নির্গত অদৃশ্য দূষণের মতো।

অর্থাৎ ক্ষতি হচ্ছে, কিন্তু কারণ নিরূপণ করা যাচ্ছে না। ফলে ই-বর্জ্যরে রেডিয়েশনে আমরা মারাত্মক রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও সেটি চাপা থেকে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে চিকিৎসকরাও আমাদের সতর্ক করতে পারছেন না। কারণ তারা রোগ শনাক্ত করতে সক্ষম হলেও রোগের উৎপত্তি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

ফলে ওই রোগী কিছুটা সুস্থ হলেও পরিবেশ বিনষ্ট ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধ হচ্ছে না। পাশাপাশি অন্য কেউ রোগাক্রান্ত হচ্ছেন, যা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াই মনে করছেন অনেকেই।

বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে দ্রুত। ই-বর্জ্যরে রেডিয়েশন-দূষণ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের খুব দ্রুত রিসাইক্লিং কারখানা গড়ে তুলতে হবে-যে কারখানায় ই-বর্জ্য প্রসেস করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী যন্ত্রাংশ তৈরি করা যাবে।



ই-বর্জ্যরে পুনর্ব্যবহার, ধ্বংস ও পরিবেশে মিশে যাচ্ছে কী পরিমাণে, তার সুনির্দিষ্ট হালনাগাদ কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ২০১৮ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। এতে বলা হয়ছিল, ওই বছর দেশে চার লাখ টন বৈদ্যুতিক ও অবৈদ্যুতিক বর্জ্য জমা হয়েছে।

এর মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ রিসাইক্লিং শিল্পে ব্যবহার করা হয়। বাকি ৯৭ শতাংশ বর্জ্যরে ভাগাড়ে ঠাঁই হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে ই-বর্জ্য বাড়ছে। ২০৩৫ সাল নাগাদ এই ই-বর্জ্য বছরে ৪৬ লাখ টনে পৌঁছবে।

ই-বর্জ্য শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ই-বর্জ্য নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক জোট গ্লোবাল ই-ওয়েস্ট স্ট্যাটিসটিকস পার্টনারশিপের (জিইএসপি) এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি পাঁচ বছরে ই-বর্জ্য ২১ শতাংশ হারে বাড়ছে।

২০১৯ সালে সারা পৃথিবীতে ৫ হাজার ৩৬০ কোটি কেজি ই-বর্জ্য জমা হয়েছে। সে বছর মোট উৎপাদিত ই-বর্জ্যরে শুধু ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে। ই-বর্জ্য বেশি জমা হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

উল্লেখ্য, দেশে ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং কারখানা রয়েছে হাতেগোনা কয়টি মাত্র, যা আমাদের ই-বর্জ্যরে তুলনায় অপ্রতুল। অথচ ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং কারখানা হতে পারে একটি সম্ভাবনাময় শিল্পও। শিল্পটির বিস্তার ঘটলে দেশে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি যেমন পরিবেশ দূষণমুক্ত হবে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট রোধ হবে।



রোধ হবে জলবায়ুর পরিবর্তনও। আমরা তাই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ই-বর্জ্যরে মজুত ও প্রসেসিং নীতিমালা তৈরির জন্য। প্রত্যাশা করছি, ই-বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য অন্তত প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ঝুঁকিমুক্ত ডামপিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে, যা নির্মাণে অর্থ প্রদানের জন্য ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক (উৎপাদিত) কোম্পানিকে সরকার বাধ্য করবে।

পাশাপাশি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি পরিবেশ অধিদপ্তরের-‘ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক পণ্য থেকে সৃষ্ট বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা-২০১৮’ শীর্ষক পুরোনো ও ব্যবহৃত পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য। এতে জলবায়ু সংকট প্রতিরোধ হবে, পরিবেশ বাঁচবে, দেশ বাঁচবে, অদৃশ্য দূষণ থেকে রক্ষা পাবে সর্বসাধারণ।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত