জলবায়ু ঝুঁকির মুখে উপকূল: বন রক্ষায় এখনই উদ্যোগ প্রয়োজন
স্টাফ রিপোর্টার, গ্রিনপেজ | ঢাকা, ২৩ জুন ২০২৫
বাংলাদেশের উপকূলীয় বনাঞ্চল শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাকবচ নয়, এটি জীববৈচিত্র্য, স্থানীয় জীবিকা এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার এক অপরিহার্য উপাদান। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে থাকা উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর টিকে থাকার জন্য এই বনভূমি সংরক্ষণের বিকল্প নেই—এমনটাই উঠে এসেছে ২৩ জুন ২০২৫ সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত এক জাতীয় কর্মশালায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) আয়োজিত ‘ন্যাশনাল ইভেন্ট অন কোস্টাল ফরেস্ট কো-ম্যানেজমেন্ট ফর ইকোসিস্টেম রিস্টোরেশন অ্যান্ড এসডিএসএস টুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তারা, আইনজীবী, পরিবেশকর্মী ও উপকূলের জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।
প্রধান অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, “বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকির শীর্ষে থাকা দেশগুলোর একটি। উপকূলীয় বন আমাদের দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে এবং স্থানীয় জনগণের জীবিকার উৎস হিসেবে কাজ করে। এটি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।”
বেলার প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “প্রকল্প গ্রহণের সময় বন বিনাশের দিকটি যথাযথভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয় না। কক্সবাজার রেল প্রকল্পে সাত লক্ষাধিক গাছ ও ২৬টি পাহাড় ধ্বংস হয়েছে। বন আইন ১৯২৭-এ স্পষ্ট বন সংজ্ঞার অভাব এবং বন বিভাগের দায়িত্ব সীমাবদ্ধতা তৈরি করছে।”
বন অধিদপ্তরের বরিশাল অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, “ভূমি ব্যবস্থাপনার জটিলতা বন সংরক্ষণে বড় বাধা। সংরক্ষিত ঘোষণা না করা পর্যন্ত কোনো আইনগত সুরক্ষা থাকে না। সহব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে সুন্দরবনের গাছ কাটা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হয়েছে।”
অক্সফাম বাংলাদেশের জলবায়ু নীতি বিশেষজ্ঞ এস এম সাইফি ইকবাল জানান, “প্রতি বছর উপকূলীয় অঞ্চলে ১ শতাংশ হারে ম্যানগ্রোভ বন হারিয়ে যাচ্ছে, যার প্রধান কারণ চিংড়ি চাষ, গাছ কাটা ও অনিয়ন্ত্রিত কার্যকলাপ। স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়ে তোলা জরুরি।”
অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (উন্নয়ন) জ্যাকব ডি লিউন বলেন, “বাংলাদেশে আইন থাকলেও কার্যকর প্রয়োগে ঘাটতি রয়েছে। জনবল, অর্থ ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়িয়ে বাস্তবায়নে অগ্রগতি আনতে হবে।”
কর্মশালায় বক্তারা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে নির্বাচনী ইশতেহারে বন সংরক্ষণের অঙ্গীকার আদায়ের আহ্বান জানান। সকলের মতে, জলবায়ু অভিযোজনের প্রেক্ষাপটে উপকূলীয় বন রক্ষা শুধু পরিবেশ নয়—জাতীয় নিরাপত্তারও অংশ।
বাংলাদেশের উপকূলীয় বন আজ অস্তিত্বের সংকটে। সহ-ব্যবস্থাপনা, আইনি সংস্কার এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে এ সংকট মোকাবিলাই এখন সময়ের দাবি। বন রক্ষা মানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এক সুসংহত প্রতিরোধ গড়ে তোলা।