28 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
ভোর ৫:৩২ | ২৭শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পরিবেশ গবেষণা পরিবেশ বিশ্লেষন প্রাকৃতিক দুর্যোগ

৪৪ বছরে ঢাকার অর্ধেক গাছ ও ৬০ শতাংশ জলাশয় হারিয়েছে

৪৪ বছরে ঢাকার অর্ধেক গাছ ও ৬০ শতাংশ জলাশয় হারিয়েছে: রাজধানীর পরিবেশ সংকট গভীর হচ্ছে

ঢাকা শহরের আকাশে এখন শুধু যানজটের ধোঁয়া নয়, হারিয়ে যাওয়া সবুজ ও জলাশয় ও এক ভয়াবহ সংকেত দিচ্ছে। চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের ২০২৫ সালের গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৮০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রাজধানীর নির্মাণাধীন এলাকা সাতগুণ বেড়েছে, ভূমির তাপমাত্রা তিন থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শহরের ৬০ শতাংশ জলাশয় হারিয়ে গেছে (চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ, ২০২৫)।  ৪৪ বছরের স্যাটেলাইট চিত্র এবং শহরের তাপ মানচিত্র বিশ্লেষণ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গবেষণা পরিচালনা করেছেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী মো. জাকির হোসেন খান, সহায়তা করেছেন সাবরিন সুলতানা ও মো. ফুয়াদ হাসান।  রাজধানীর পরিবেশগত অবক্ষয় শুধু নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতা নয়; এটি নাগরিকদের পরিবেশগত অধিকার ও ন্যায়বিচারেরও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।  শহরের পরিকল্পনার বাইরে সম্প্রসারণ এবং অরক্ষিত নির্মাণ কাজের ফলে গাছ ও জলাশয় ধ্বংসের হার উদ্বেগজনক।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা তার মোট গাছের প্রায় অর্ধেক হারিয়েছে।  যেখানে ১৯৮০ সালে শহরের ২১.৬ শতাংশ এলাকায় গাছ ছিল, তা এখন কমে ১১.৬ শতাংশে নামিয়ে এসেছে।  আদাবর, রামপুরা, কাফরুল, বংশাল ও ওয়ারী অঞ্চলে গাছপালার উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে।  সূত্রাপুর, মিরপুর, গেণ্ডারিয়া ও কাফরুলের মতো অঞ্চলে প্রায় সব জলাশয় হারিয়ে গেছে।  শহরের ৫০টি থানার মধ্যে মাত্র ছয়টিতে নূন্যতম পরিমাণ জলাশয় রয়ে গেছে।  শ্যামপুর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, রামপুরা ও দারুসসালাম এলাকায় তাপমাত্রা নিয়মিতভাবে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রেকর্ড হচ্ছে (চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ, ২০২৫)।

মো. জাকির হোসেন খান দেখিয়েছেন যে, ২০৩৫ সালের মধ্যে ঢাকার জনসংখ্যা আড়াই কোটি ছাড়াবে, কিন্তু তখনও শহরের গাছের পরিমাণ মাত্র ১১.৬ শতাংশ এবং জলাশয় মাত্র ১–২ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকবে। তাপমাত্রার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি শহরের পরিবেশ ও মানুষের জীবনধারার ওপর বড় প্রভাব ফেলবে।  তিনি তুলনা করে দেখিয়েছেন, সিঙ্গাপুর ও সিওলের মতো শহরে গাছের পরিমাণ ৩০ থেকে ৪৭ শতাংশ, দিল্লি ও জাকার্তা ঢাকার চেয়ে এগিয়ে আছে, কেবল করাচি ঢাকা শহরের চেয়ে পিছিয়ে। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকায় একটি প্রকৃতি-সমন্বিত নগর উন্নয়ন মডেলের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা সিঙ্গাপুরের অনুপ্রেরণা থেকে উদ্ভূত হলেও স্থানীয় প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মানানসই হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রিফাত মাহমুদ উদ্ভাবনী ও কমিউনিটি-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।  শহরের ফ্লাইওভারগুলো সবুজায়ন করা, যুবকদের পরিবেশ সচেতন করা এবং কমিউনিটি মালিকানায় প্রকৃতি সংরক্ষণ করা কার্যক্রমগুলোকে তিনি শহরের পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেছেন।  স্থানীয় উদ্যোগ ছাড়া প্রকৃতি সংরক্ষণ স্থায়ী হবে না।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের সাম্প্রতিক রুলিং তুলে ধরে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে যে, হারানো জলাশয় পুনরুদ্ধার করা, বনাঞ্চল ও জলাশয় দখলকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা, ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান সংস্কার করা, পরিবেশগত বাফার ও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল সংরক্ষণ, সংবেদনশীল এলাকায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও সীমিত করা এবং কমিউনিটিগুলোকে প্রকৃতির রক্ষক হিসেবে ক্ষমতাবান করা জরুরি।

ঢাকার হারানো সবুজ ও জলাশয় শুধু দৃশ্যমান ক্ষতি নয়; এটি নাগরিকদের স্বাস্থ্য, জীবিকা এবং শহরের স্থায়িত্বের জন্য বড় হুমকি। দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, রাজধানী জলবায়ু বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। নগর পরিকল্পনা, আইন প্রণয়ন, স্থানীয় উদ্যোগ এবং জনসচেতনতার সমন্বয়ই শহরের পরিবেশ পুনরুদ্ধারের একমাত্র উপায়, এবং সময় সীমিত।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত