সিলেটে অবৈধ পাথর উত্তোলন সংকট: টেকসই পরিবেশগত চর্চার জন্য বৈশ্বিক আহ্বান
বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের ভোলাগঞ্জ কোয়ারি, যেখানে সাদা পাথর (শাদা পাথর) উৎপন্ন হয়, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় পর্যটন এবং নির্মাণ শিল্প এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। তবে সম্প্রতি এখানে যে অবৈধ পাথর উত্তোলন চলছে, তা শুধু পরিবেশ নয়, অর্থনীতিকেও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এই সংকট জাতীয় এবং বৈশ্বিক স্তরে প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে জরুরি আলোচনা শুরু করেছে, যেখানে স্থানীয় জনগণ এবং শক্তিশালী আইন প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
২০২৫ সালের আগস্ট মাসে ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে শাদা পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন ও সরানোর ঘটনা দেশে পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ সরকার এই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক ক্ষতি ও পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে।
এই কমিটি, যার মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক অধ্যাপকও আছেন, ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ প্রতিবেদন দিতে প্রস্তুত।
এটি বৈশ্বিক সমস্যার একটি প্রতিফলন। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন আমাজন বন, কেন্দ্রীয় আফ্রিকা, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে অবৈধ খনিজ উত্তোলন এবং বনধ্বংস হচ্ছে, সিলেটের ঘটনা ঠিক তেমনই একটি সংকট যা পরিবেশ ও স্থানীয় জনগণের উপকারে অন্তর্ভুক্তির উপর আঘাত হানছে।
সিলেটের ভোলাগঞ্জ কোয়ারির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিশেষ একটি সুযোগ পাচ্ছে যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং পর্যটনের টেকসই উন্নয়নকে পুনরায় মূল্যায়ন করা সম্ভব।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে সে অঞ্চলের উন্নয়ন একদিকে যেমন ঘটবে, অন্যদিকে পরিবেশও সুরক্ষিত থাকবে।
বিশ্বব্যাপী জীববৈচিত্র্য রক্ষা, অবৈধ খনিজ উত্তোলন বন্ধ এবং স্মার্ট প্রযুক্তি-এর মাধ্যমে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশ ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছে।
কোস্টা রিকা, কেনিয়া এবং ব্রাজিল এই ধরনের ইকো-ট্যুরিজম এবং সবুজ অর্থনীতি মডেলগুলো বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে যে, পর্যটন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা একসঙ্গে সম্ভব। সিলেটও এই পথে এগিয়ে যেতে পারে, যদি স্থানীয় জনগণকে সম্পদের সুরক্ষায় আরও সক্রিয় অংশীদার করা হয়।
এটি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে। টেকসই উন্নয়ন এবং সবুজ অর্থনীতি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যদি আইন প্রয়োগ শক্তিশালী করা হয় এবং স্থানীয় জনগণকে সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়।
অবশেষে, সিলেটের শাদা পাথর উত্তোলন সংকট প্রমাণ করছে যে অবৈধ সম্পদ উত্তোলন শুধুমাত্র পরিবেশের ক্ষতি করে না, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও বিপজ্জনক।
পৃথিবীজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের নিঃশেষ ঘটছে, তাই দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ যদি টেকসই উন্নয়ন এবং সবুজ অর্থনীতি গ্রহণ করে, তাহলে আমরা একটি সবুজ, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ তৈরি করতে পারব, যা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ হবে।