আর্কটিকের ‘আইস সিডার’ রোবট : ‘আইস সিডার’ প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে আর্কটিকের সামুদ্রিক বরফ দ্রুত বিলীন হচ্ছে। এই সঙ্কট মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা এখন ‘জিও-ইঞ্জিনিয়ারিং’ (Geo-engineering)-এর এক উচ্চাভিলাষী এবং বিতর্কিত প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন। এই প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে বিশেষভাবে ডিজাইন করা স্বশাসিত রোবট—‘আইস সিডার’ (Ice Seeder)—যা বরফের উপর বিশেষ ধরণের পদার্থ ছড়িয়ে দিয়ে গলনের গতি কমাতে সাহায্য করবে।
‘আইস সিডার’ রোবটগুলো বরফের উপর অত্যন্ত সূক্ষ্ম, উজ্জ্বল এবং উচ্চ প্রতিফলনক্ষম (highly reflective) সিলিকেট কণা ছড়ায়। এই কণাগুলো বরফের অ্যালবেডো (Albedo) বা সূর্যের আলো প্রতিফলনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর ফলে বরফ কম পরিমাণে তাপ শোষণ করে এবং গলনের গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসে।
‘ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (NSF)’-এর অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পের প্রাথমিক পাইলট পরীক্ষাগুলি ‘আর্কটিক সার্কেল’ অঞ্চলে সফল হয়েছে বলে সম্প্রতি ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রযুক্তি স্বল্প সময়ের জন্য বরফস্তরের পুরুত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
তবে এই প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। সমালোচকরা সতর্ক করে বলেছেন যে, আর্কটিকের মতো সংবেদনশীল ইকোসিস্টেমে কৃত্রিমভাবে কণা ছড়ানো সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য, বিশেষ করে প্ল্যাঙ্কটন-এর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এছাড়াও, এই ধরনের বৃহৎ আকারের প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের বাইরে থাকায় এটির বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক ব্যবহার নিয়েও গভীর উদ্বেগ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এখন এই প্রযুক্তির ঝুঁকি ও সুবিধা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনা শুরু করার এবং একটি নৈতিক কাঠামোর মধ্যে এর গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
