কংক্রিটে আচ্ছাদিত ঢাকার পরিবেশ
জলাধার ভরাট করে ও সবুজ খালি জায়গায় একের পর এক ভবন তৈরির মূল্য দিতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে। কমতে কমতে ২৮ বছরের ব্যবধানে জলাভূমি এসে ঠেকেছে মাত্র ২ দশমিক ৯১ শতাংশে এবং সবুজ এলাকা ৭ দশমিক ৯ শতাংশে।
শনিবার ঢাকায় এ বিষয়ক এক গবেষণার বরাতে এসব তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, প্রায় ৩০৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঢাকা শহরে ১৯৯৫ সালে ঢাকা শহরে জলাধার ও জলভূমি ছিল নগরীর মোট আয়তনের ৩০ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সবুজ এলাকার পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ওই সময় ৪৩ দশমিক ৭২ শতাংশ এলাকা নির্মাণের আওতায় এসেছিল, যা এখন বেড়ে হয়েছে ৭৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
কোনো ধরনের নিয়ম না মেনে খেলার মাঠ দখল করে ক্লাব, বিপণিবিতান, হাটবাজারসহ নানা স্থাপনা এবং জলাভূমি ভরাট করে প্রতিনিয়ত আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করায় সবুজ ও জলাভূমি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে বলে এ গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, একটি আদর্শ শহরে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জলাভূমি এবং ১৫ শতাংশ সবুজ থাকাটা প্রয়োজন।
রাজধানী ঢাকায় পার্কের উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণও অত্যন্ত বেশি। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বনানী পার্ক, বিচারপতি সাহাবুদ্দিন পার্ক, ওসমানী এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যথাক্রমে ৪২, ৩৭, ৫২ ও ৩৭ শতাংশ এলাকা কংক্রিটে আচ্ছাদিত।
এমন প্রেক্ষাপটে বক্তারা উন্নয়নের নামে জলাশয় ভরাট করা ও সবুজ নষ্ট করে সরকারি-বেসরকারি নির্মাণ কার্যক্রম হাতে নেওয়ার সমালোচনা করেন। এ বিষয়ে নিয়ম মেনে চলা ও সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ‘বিউটিফিকেশনের’ জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে তা সবুজ সংরক্ষণে ব্যয়ের পরামর্শ দেন।
আলোচনায় সাবের হোসেন বলেন, একটা পর্যায়ে ঢাকা আদৌ বসবাসযোগ্য হবে কি না, সেই প্রশ্নটা অনেকের মনেই আসতে পারে। একটা শহরে জনপ্রতি গ্রিন স্পেস থাকা দরকার ৯ দশমিত ৩ মিটার। সেখানে দিল্লি ও করাচিতে আছে ৫ মিটার করে। আর ঢাকায় আছে মাত্র ৩।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় প্রতি সাড়ে ১২ হাজার জনে দুই একর খেলার মাঠ ও এক একর পার্ক থাকার প্রয়োজন থাকলেও বর্তমান জনসংখ্যা বিবেচনায় ৩৭ হাজার ৯০০ জনে এক একর মাঠ বা পার্ক রয়েছে।
এছাড়া যেকোনো পার্কের সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ এলাকা কংক্রিটে আচ্ছাদিত থাকতে পারে। কিন্তু ঢাকার পার্কগুলোর দিকে তাকালে উল্টো চিত্র চোখে পড়ে।